মাঈনুদ্দিন খালেদ : নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষের গলার কাঁটা এখন গর্জনিয়া সড়ক। বর্ষা আসলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয় প্রতিবছর। সড়কের শাহ মোহাম্মদ পাড়া সহ মাত্র ৫ কিলোমিটার অকেজো সড়কের জন্যে এ অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় ইউনিয়নের লোকজন উপজেলার সাথে কোনোভাবেই সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেনা। কারণ ইউনিয়নের সাথে উপজেলা সদর নাইক্ষ্যংছড়ির সাথে যোগাযোগের ৯ কিলোমিটার সড়কের ৭ কিলোমিটারই অন্য উপজেলার। যার মধ্যে ৫ কিলোমিাটার সড়কই ভঙ্গুর ও খানাখন্দ। যা রামু উপজেলার গর্জনিয়ারই অংশ।
সরেজমিন গিয়ে আরো জানা যায়, উপজেলার ৪৬৩.৬১ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাইশারী ইউনিয়ন এলাকাটি খুবই উর্বর। এতে করে সব কিছুর উৎপাদন হয় বেশী। বিশেষ করে রাবার শিল্পের জন্যে প্রসিদ্ধ দেড় যুগ আগে থেকেই। সব মিলে ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত দ্রব্যদি এখন দেশের নানা প্রান্তে এবং দেশের বাইরেও রপ্তানী হচ্ছে। বিশেষ করে রপ্তানী পণ্য রাবার শিল্পের বিষয়টি সবার বোধগম্য। এ কারণেই দেশের বড় বড় শিল্পমালিকরা এখানে পা ফেলেছেন, বিনিয়োগ করেছেন গত দু’যুগ ধরে। আজ লক্ষ একর রাবার বাগানের গাছগুলো রাবার দিচ্ছে বর্তমানে। আর এ কারণে মালিকানায় যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পমালিক শূফী মিজানুর রহমান, চলচিত্র নায়ক সোহেল রানা সহ শতাধিক নামীদামি ব্যক্তিবর্গ এ বাইশারীতে আসেন-যান। নিয়মিত ব্যবসা করছেন।
বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলম কোম্পানী চকরিয়া নিউজকে বলেন, কলেজ, মাদরাসা, স্কুলসহ প্রতিষ্ঠান রয়েছে শতশত। পুলিশ ও বিজিবি ক্যাম্পও রয়েছে একাধিক। এভাবে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে এখানে। কিন্ত দূ:খের বিষয় এখানে ইউনিয়নের বাইরে আসা যাওয়া করতে বা উপজেলার সাথে সরাসরি কোন সড়ক এখনও গড়ে উঠে নি। অর্থাৎ স্বাধীনতা পরর্বতী ৪৯ বছরেও এ ইউনিয়নের মানুষ পরাধীন। বাইশারী থেকে উপজেলা সদরে যেতে ৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৭ কিলোমিটার অন্য উপজেলার (রামু উপজেলার গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন) এলাকার পার হয়ে নিজেদের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় যেতে হয়। সড়কের কচ্ছপিয়া অংশের তিতার পাড়া, গর্জনিয়া অংশের শাহ মোহাম্মদ পাড়া, থিমছড়ি, বড়বিল ও থোয়াইগ্যারকাটা অংশটি বাইশারীবাসীর গলার কাটার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বর্তমানে। তিনি বলেন, তারা সড়কটি না পারছে বাধঁতে আর না পারছে যাতায়াত করতে। অভিভাবকহীন অবস্থা যেন মরণফাঁদ।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি জাহাঙ্গির আলম বাহাদুর বলেন, উপজেলা আর ইউনিয়ন ভিন্ন ভিন্ন ভূখন্ডে। সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই। ইউনিয়ন আর উপজেলার মাঝখানে রামু উপজেলা হওয়ায় নাইক্ষ্যংছড়ির প্রশাসনের কেউ কর্ণপাতও করেন না এ বিষয়ে। আর সংশ্লিষ্টরাও তেমন আন্তরিক না হওয়ায় আজ সড়কটিতে পুকুরসম ২ শতাধিক র্গত। ফলে ভালো কোন গাড়ি এ সড়কে চলাচল করতে পারে না। এক কথায় দামি কোন গাড়িই চলে না এ সড়কে। ফলে বাইশারী অন্ধকার।
গতকাল ৫ জুলাই এ প্রতিবেদক সরেজমিন পরির্দশনে গিয়ে জানতে পারেন,গর্জনিয়া ইউনিয়ন এলাকার বড়বিলে সে দিন শহর থেকে একজন বড়লোক আসবেন, তাই এলাকার ক’জন মিলে সড়কটি কোদাল দিয়ে মেরামত করছেন। মেরামতকারী গ্রাম্য এ মিস্ত্রি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, তাদের ইউনিয়নে নেতারা থাকেন শহরে। খোদ চেয়ারম্যানও।
তাই সড়কের এ অবস্থা। আর নেতারা যখন আসেন, কার গাড়ি, নোহা গাড়ি বা পাজেরো গাড়ি নিয়ে আসলে তারা রাস্তা ঠিক করে আস্তে আস্তে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। আজ তা-ই করছেন তারা।
তবে এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে এ সড়কটির বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করলেও সংযোগ না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত: